পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় “কাজ” কথাটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। কাজ এবং শক্তির একক হচ্ছে জুল। শক্তি প্রয়োগ করে কাজ করা যায় এবং কাজ করার হার অর্থাৎ একক সময়ে সম্পন্নকৃত কাজকে ক্ষমতা বলে। কোনো তড়িৎ যন্ত্র প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ তড়িৎ শক্তি ব্যয় করে কিংবা অন্য শক্তিতে (তাপ, আলো, যান্ত্রিক ইত্যাদি) রূপান্তরিত করে তাকে তড়িৎ ক্ষমতা বলে।
কিলোওয়াট
কোনো রোধ বা তড়িৎ যন্ত্রের দুই পাশের বিভব পার্থক্য এক ভোল্ট হলে যদি এর মধ্য দিয়ে এক অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহিত হয়, তবে ঐ যন্ত্রের ক্ষমতা এক ওয়াট।
এক ওয়াট = ১ ভোল্ট × ১ অ্যাম্পিয়ার
যখন অনেক বেশি তড়িৎ ক্ষমতা ব্যবহৃত হয় তখন সেটাকে কিলোওয়াট বা মেগাওয়াটে প্রকাশ করা সুবিধাজনক ।
১ কিলোওয়াট = ১০০০ ওয়াট বা ১০৩ ওয়াট এবং ১ মেগা ওয়াট = ১০৬ ওয়াট।
কিলোওয়াট-ঘণ্টা
এক ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো তড়িৎ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এক ঘণ্টা ধরে তড়িৎ প্রবাহিত হলে যে পরিমাণ তড়িৎ শক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয় (যেমন বাতি জ্বললে আলোক শক্তি বা পাখা ঘুরালে যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যায়) সেটি হচ্ছে এক ওয়াট-ঘণ্টা।
১ ওয়াট-ঘণ্টা
= ১ ওয়াট× ১ ঘণ্টা
অনেক সময় ওয়াট ঘণ্টার পরিবর্তে কিলোওয়াট ঘণ্টাও ব্যবহার করা হয়। আমরা ইচ্ছা করলে এক কিলোওয়াট ঘণ্টা কতটুকু শক্তি সেটাও বের করতে পারি।
বা, ১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা = ১০০০ ওয়াট × ৩৬০০ সেকেন্ড
৩,৬০,০০০০ ওয়াট-সেকেন্ড
= ৩,৬০,০০০০ জুল
অর্থাৎ শক্তির এককে এটি ৩.৬ মেগা জুল।
আন্তর্জাতিকভাবে, তড়িৎ সরবরাহকে কিলোওয়াট-ঘণ্টা এককে পরিমাপ করা হয়। এই একককে বোর্ড অব ট্রেড (BOT) ইউনিট বা সংক্ষপে ইউনিট বলে। আমরা যে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি তা এই এককেই হিসাব করা হয় ।
তড়িৎ ক্ষমতার হিসাব
আমরা জানি, তড়িৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসেই আমাদের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ খরচের একটি বিল পাঠায়। এই প্রতিষ্ঠান প্রতি ইউনিটের মূল্য ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী আমরা তড়িৎ বা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকি। অর্থাৎ ব্যয়িত তড়িৎ শক্তির খরচ = ব্যয়িত তড়িৎ শক্তির একক প্রতি এককে খরচ। সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রে (লাইট, ফ্যান, কম্পিউটার) কী পরিমাণ বিদ্যুৎ বা তড়িৎ ক্ষমতার প্রয়োজন হয়, সেটি উল্লেখ থাকে। কাজেই সেখান থেকে সহজেই আমরা ব্যয়িত শক্তি বের করতে পারব। আমরা ব্যয়িত শক্তি ইউনিট বা কিলোওয়াট বের করতে চাই। যদি একটি যন্ত্রের ক্ষমতা P ওয়াট হয় এবং সেটি আমরা t ঘণ্টা ব্যবহার করি তাহলে ব্যয়িত শক্তি E হচ্ছে:
E = P × t ওয়াট ঘন্টা
E = (P × t) / ১০০০ কিলোওয়াট ঘণ্টা (অথবা ইউনিট) সুতরাং কোনো যন্ত্রের ক্ষমতা জানলে সহজেই তড়িৎ শক্তি ব্যয়ের খরচ বের করতে পারি। যেমন ৬০ ওয়াটের একটি বাল্ব (P=৬০ W) প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে ৩০ দিন (t=৩০×৫ hour) জ্বললে কত তড়িৎ শক্তি ব্যয় হবে?
আমরা জানি,
ব্যয়িত শক্তি = (P × t} / ১০০০ ইউনিট
- ৬০ × (৩০ x ৫)/১০০০ ইউনিট x
= ৯ ইউনিট
এখন যদি প্রতি ইউনিটের মূল্য ৮ টাকা হয়, তবে উচ্চ পরিমাণ বিদ্যুতের জন্য মোট ব্যয় হবে মোট তড়িৎ ব্যয় - ৯ x ৮ টাকা
= ৭২ টাকা
220V- 60W-এর অর্থ : তড়িৎ আলো পাওয়ার জন্য আমরা যে বাল্ব ব্যবহার করি তার গায়ে দুটি সংখ্যার পাশে V এবং W লেখা থাকে। কোনো বাঘের পারে ২২০ এবং ৬০w লেখা থাকলে বোঝা যায় ২২০ বিভব পার্থক্য বাল্বটিতে সংযুক্ত করলে বাল্বটি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে এবং তখন প্রতি সেকেন্ড ৬০ জুল বৈদ্যুতিক শক্তি আলো ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।এনার্জি সেভিং বান্ধের সুবিধা : এক সময় আমরা সাধারণ বার ব্যবহার করতাম। এই বারে একটি ধাতব ফিলামেন্টকে উত্তপ্ত করে আলো তৈরি হতো বলে প্রচুর তাপ শক্তির প্রয়োজন হতো। প্রযুক্তির কারণে এখন গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করার জন্য এনার্জি সেভিং বাল্ব সহজ লভ্য হয়ে গেছে। দুই ধরনের এনার্জি সেভিং বাল্ব রয়েছে সি.এফ.এল (Compact Fluroscent Lamp) এবং এল.ই.ডি (Light Emitting Diode) বাল্ব। এই এনার্জি সেভিং বাবে বিদ্যুৎ ২০-৮০% সাশ্রয় হতে পারে এবং সাধারণ বাল্বের তুলনায় এটি ৩ থেকে ২৫ গুণ বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি পরিবারে যদি একটি করে সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করে, তবে যে পরিমাণ শক্তি বাঁচে তা দিয়ে প্রতিবছরে ৩০ লক্ষ পরিবারে তড়িৎ সংযোজন দেওয়া সম্ভব। আমরা যদি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করে, শক্তির অপচয় কমাতে পারি, তবে জ্বালানির ওপরও আমাদের নির্ভরতা কমাতে পারি। কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে তড়িৎ উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। এনার্জি সেভিং বাল্ব সাধারণ বাল্বের চেয়ে বেশি দিন টিকে। ফলে কমসংখ্যক বার পরিত্যয় হয়। যার কারণে ময়লা আবর্জনা ব্যবস্থানায়ও সুবিধা হয় পরিবেশের উপর চাপও কম পড়ে।
একক কাজ
কাজ: কেন সবার এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা উচিত তার উপর একটি পোস্টার তৈরি করো।
আরও দেখুন...